Header Ads

মুখের ক্যান্সার হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও এর চিকিৎসা সম্পর্কে কতটুকু জানেন?

মুখের ক্যান্সার হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও এর চিকিৎসা সম্পর্কে কতটুকু জানেন?

ক্যান্সার বা কর্কট রোগ মানুষের কাছে এখনও একটি অভিশাপ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এতো উন্নতির পরও এই রোগের সঠিক কারণ বা দ্রুত চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো মুখের ক্যান্সার বা Oral Cancer. চলুন তবে জেনে নেই মুখের ক্যান্সার এর কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে!

মুখের ক্যান্সার বা ওরাল ক্যান্সার নিয়ে যত কথা

মুখের ক্যান্সার কী? 

মুখের ক্যান্সার এমন এক ধরনের ক্যান্সার, যা মুখ বা ঠোঁটের টিস্যুুগুলোতে হয়ে থাকে। এটি মাথা  গলার ক্যান্সারের অন্তর্ভুক্ত। যা বেশিরভাগ সময়ে মুখজিহ্বা  ঠোঁটের স্কোয়ামাশ টিস্যুতে হয়ে থাকে। প্রতি বছর আমেরিকাতে প্রায় ৪৯,০০০ এর বেশি  মানুষ Oral Cancer বা মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় যাদের মধ্যে অধিকাংশের বয়সই ৪০ বছরের বেশি। 

মুখের ক্যান্সারের ধরন

মুখের ক্যান্সারের ধরন - shajgoj.com
মুখের ক্যান্সারের মধ্যে নিচের ক্যান্সারগুলো বেশি দেখা যায়ঃ
. ঠোঁট
২. জিহ্বা
৩. গালের ভিতরের অংশ
৪. মাড়ি
৫. মুখের তালু
কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা সাধারণত প্রথমে ডেন্টিস্টের কাছেই ধরা পড়ে।  জন্য বছরে দুই বার দাঁত  এর আশপাশের অঞ্চল পরীক্ষা করানো জরুরি। 

মুখের ক্যান্সার হবার কারণ

মুখে ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম বড় একটি কারণ হলো তামাক গ্রহণ করা। সেটা হতে পারে সিগারেটচুরুট বা জর্দার মাধ্যমে। যারা নিয়মিতভাবে বেশি পরিমাণে মদ্যপান এবং তামাক সেবন করে থাকে তারা এই রোগের ঝুঁকিতে আছে সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য কারণগুলো হলোঃ
মুখের ক্যান্সার হবার কারণ - shajgoj.com
২) মুখে দীর্ঘদিন অনেকটা সময় সূর্যের আলো পড়লে
৩) পরিবারের কারোর এই ক্যান্সার হওয়ার পূর্ব ইতিহাস থেকে থাকলে।
৪) দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
৫) অপুষ্টি
৬) লিঙ্গ
গবেষণায় দেখা গেছে মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা প্রায় দ্বিগুণ।

মুখের ক্যান্সার এর লক্ষণ

মুখের ক্যান্সারের লক্ষণগুলো হলোঃ
১) ঠোঁট বা মুখে দীর্ঘদিনের ঘা
২) মুখের যে কোন জায়গায় অস্বাভাবিক কোন গোঁটা বা পিন্ড দেখা দেওয়া
মুখের ক্যান্সার এর লক্ষণ - shajgoj.com
৩) দাঁত পড়ে যাওয়া
৪) গিলতে ব্যথা বা অসুবিধা বোধ করা
৫) গলায় কোন পিন্ড দেখা দেওয়া
৬) কানে ব্যথা অনুভূত হওয়া
৭) ওজন অল্প সময়ের মধ্যে অনেকখানি কমে যাওয়া
৮) নিচের ঠোঁটমুখগলা বা গালে অবশতা অনুভূত হওয়া
৯) জিহ্বায় ব্যথা
১০) চোয়ালে ব্যথা বা অবশতা 
যদিও মুখে ঘা এবং কানে ব্যথা অন্য কোন অসুখেও দেখা দিতে পারেতবুও উপরের লক্ষণগুলো একসাথে দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসককে দেখানো উচিত।   

মুখের ক্যান্সারে পরীক্ষা

মুখের ক্যান্সারে পরীক্ষা - shajgoj.com
ডাক্তার নিচের পরীক্ষাগুলোর একটি করে থাকেনঃ
. X ray– মুখমন্ডলবুকে বা ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়েছে নাকি সেটা দেখার জন্য
. CT scan-  মুখঠোঁটগলা বা ফুসফুসের কোথাও কোন টিউমারের উপস্থিতি বোঝার জন্য
৩. MRI scan- ক্যান্সারের স্টেজ এবং মুখ  গলার প্রকৃত অবস্থা বোঝার জন্য      

 চিকিৎসা পদ্ধতি

মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে এর ধরনঅবস্থানস্টেজ সবগুলোর উপর। প্রাথমিক স্টেজে ধরা পড়লে অনেক সময় খুব বেশি সময় লাগে না। যদিও সেক্ষেত্রে রোগীর বয়সও অনেক বড় একটি ফ্যাক্টর। আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট (National Cancer Institute)-এর গবেষণায় পাওয়া রিপোর্টে দেখা যায়৬০ শতাংশ Oral Cancer রোগী পাঁচ বছর বা এরও বেশি সময় বেঁচে থাকেন। যতো দ্রুত ক্যান্সার ডায়াগনোসিস (Cancer diagnosis) করা যায়, চিকিৎসার পর রোগীর দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ততো বেশি। এমনকি স্টেজ-১ এবং স্টেজ-২ এর রোগীদের ক্ষেত্রে এই হার (৭০৯০শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এই পরিসংখ্যান থেকে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন সময়মতো ক্যান্সার সনাক্ত হওয়া এবং এর চিকিৎসা কতোটা জরুরি।      
১. সার্জারী
মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা - shajgoj.com
চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত সার্জারীর মাধ্যমে টিউমার বা কারসিনোজেনিক লিম্ফ নোড (Carcinogenic lymph nodes) অপসারণ করা হয়। পাশাপাশি মুখ  গলার আশপাশের টিস্যুও নেয়া হয় অনেক সময়।
২. রেডিয়েশন থেরাপি
 মুখের ক্যান্সারে রেডিয়েশন থেরাপি - shajgoj.com
রেডিয়েশন থেরাপি এই চিকিৎসার আরেকটি অপশন।সপ্তাহে ২দিন বা  দিন করে  সপ্তাহ থেকে  সপ্তাহ পর্যন্ত এই থেরাপি চলতে পারে। ক্যান্সার Advanced stage এর হলে রেডিয়েশন থেরাপির সাথে কেমোথেরাপিও দরকার হতে পারে।
রেডিয়েশন থেরাপির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। যেমনঃ
১) মুখে ঘা
২) মুখ শুকিয়ে আসা
৩) দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া
৪) মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
৫) বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
৬) চামড়া এবং মুখের বিভিন্ন ইনফেকশন
৭) অবসাদ
৮) স্বাদ এবং গন্ধ নিতে অপরাগতা ইত্যাদি
৩. কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি হলো ঔষধের মাধ্যমে শরীরে ক্যান্সার কোষগুলো নষ্ট করে দেয়া। সেই ঔষধ মুখে খাওয়ার হতে পারে অথবা ধমনীর মাধ্যমেও দেয়া যেতে পারে।এই প্রক্রিয়াটি নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর।      
কেমোথেরাপির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো হলোঃ
মুখের ক্যােন্সার কেমোথেরাপির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া - shajgoj.com
১) চুল পড়া
২) মুখ এবং মাড়িতে ব্যথা
৩) মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া
৪) রক্তশূন্যতা
৫) দুর্বলতা
৬) ক্ষুধামন্দা
৭) বমি বমি ভাব এবং বমি
৮) ডায়রিয়া ইত্যাদি
 ৪. পুষ্টিঃ
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সুস্থ খাদ্যাভাস সব অসুখ থেকেই আমাদের দূরে রাখে। ভিটামিন এবং মিনারেলস  সমৃদ্ধ ফলমূল এবং শাক-সবজি মুখের সুস্থতা রক্ষা করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও মদ্যপানধূমপান এবং তামাক সেবন থেকে যতো দূরে থাকবেন এই অসুখ থেকে।
মুখের ক্যান্সার নিয়ে আদ্যপান্ত আজকের মতো এতোটুকুই। সবার সুস্থতা কামনা করে আলোচনা এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

No comments

Thank You

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.